মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ২০২২
১৭ এপ্রিল ১৯৭১
১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার (মুুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় যা মুুজিবনগর সরকার নামে অভিহিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১০ এপ্রিল ১৯৭১
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়।
২৫ মার্চ-২৬মার্চ ১৯৭১
(২৬ মার্চ ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা করার কারণে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস)
এর কিছু পরেই পাকিস্তান বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়।
২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট নামে পাকিস্তান বাহিনী বাঙালির উপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়।পাকিস্তান বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমন এবং হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে শুরু হয় বাঙালীর প্রতিরোধ।
২৫ মার্চ ১৯৭১
১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনার নামে প্রহসন করতে থাকেন। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা আক্রমন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হেডকোয়ার্টার এবং নিরস্ত্র জনসাধারনের উপর। ঢাকা একটি মৃত্যু নগরীতে পরিণত হয়।
২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন,“ এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানে আছ এবং যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতারিত করে চুড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।”
৭ মার্চ ১৯৭১
১৯৭১ সালের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খাঁন জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দিলে সারা বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকা, ৩ মার্চ সারা দেশে হরতালের ডাক দেন । সমস্ত দেশ কার্যত: অচল হয়ে যায়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভা একটি জনসমুদ্রে পরিণত হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয়বাংলা।
১৯৭০
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । আওয়ামীলীগ পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে । বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার জন্য শুরু হয় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র । নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করা সত্তে¡ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান অযৌক্তিক ভাবে পাকিস্তানের দুঅংশের জন্য দুজন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন।
১৯৬৯
১৯৬৯ সালের ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী উত্তাল আন্দোলন গড়ে ওঠে । ইতিহাসে এই আন্দোলন ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান নামে পরিচিত।
আন্দোলনের চাপে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য আসামীদের মুক্তি দেয় ।
২৩ ফেব্রæয়ারি রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয় ।
৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু বার্ষিকীর আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন বাংলাদেশ।
১৯৬৮
১৯৬৮ সালে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামী করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করে । ইতিহাসে এই মামলা ঐতিহাসিক “আগরতলা ষড়যন্ত্র ” মামলা নামে পরিচিত ।
১৯৬৬
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন ।
১৯৬৬ সালের ১ মার্চ তিনি আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ৬ দফার স্বপক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে গণসংযোগ শুরু করলে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু বার বার গ্রেফতার হন ।
১৯৫৩-১৯৬০
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । ১৪ নভেম্বর পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন ।
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করে ২৩৭ টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ আসনে বিপুল বিজয় অর্জন করে । বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ আসনে বিজয়ী হন এবং কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। ২৯ শে মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দেন এবং ৩০ মে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন ।
১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ।
১৯৫৫ সালে ২১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ নামে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের জন্ম দেন । তিনি এ দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও দূর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন ।
১৯৬০ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন ।